সোমবার, ২২ ফেব্রুয়ারী, ২০১৬

ভুলে যাওয়া ইতিহাস

ঘটনা প্রবাহ ১৭৫৭-১৯৪৭

 ১৭৫৭ ॥ ২৩ জুন : পলাশীর যুদ্ধ : পলাশীর যুদ্ধে প্রহসন, বিশ্বাসঘাতকতা এবং ছলচাতুরির মাধ্যমে নবাব সিরাজ-উদ- দৌলাকে পরাজিত করে ইংরেজ শাসকরা ভারতে তাদের সাম্রাজ্যের সূচনা করে। শুরু হয় ভারতীয় উপমহাদেশে দীর্ঘ প্রায় দু'শ' বছরের পরাধীনতার ইতিহাস। পাশাপাশি ইংরেজ প্রভুত্বের বিরুদ্ধে সংগ্রামেরও ইতিহাস।

১৭৬০ ॥ বিশ্বাসঘাতক মীরজাফরকে সরিয়ে ইংরেজরা মীর কাশিমকে ক্ষমতহায় বসায়। স্বাধীনচেতা মীর কাশিমই প্রতিরোধের প্রথম মশাল জ্বালালেন। গদিতে বসেই তিনি দেখলেন যে, বাংলা সুবার কৃষক সমাজ, তাঁতী, বণিক সবাই বোফানির ইংরেজ কর্মচারীদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ। কলবাতায় ইংরেজ বড়কর্তা জানকিটার্টকে এক চিঠিতে তিনি লিখলেন: ‘তোমাদের কর্মচারীরা চাষী ও বণিকদের কাছ থেকে জোরজবরদস্তি করে জিনিসপত্র কেড়ে নেয়। হয় দাম দেয় না, নয়তো যা দাম তার মাত্র সিকিভাগ দেয়। তোমাদের গোমস্তরা ব্যবহার করে যেন তারাই জমিদার, তালুকদার বা মালিক।" ফলে নবাবের সঙ্গে বিরোধ যুদ্ধে পরিণত হলো।

১৭৬৪ ॥ বকঘারের যুদ্ধে মীর কাশিম, অযোধ্যার নবাব সুজাউদ-দৌলা ও দিল্লীর পলাতক বাদশাহ শাহ্ আলমের সেনাদল পরাজিত হলো ইংরেজদের কাছে। নতি স্বীকার করলেন নবাব ও বাদশাহ্। কিন্তু হার মানলেন না মীর কাশিম। পলাতক অবস্থায় ১৭৭৭ সালে মারা যান ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের এই পরাজিত মহান সৈনিক।

১৭৬৫ ॥ ১২ অক্টোবর গভর্নর ক্লাইভ সম্রাট দ্বিতীয় শাহ্ আলমের হাত থেকে বাংলা, বিহার ও উড়িষ্যার দেওয়ানি সনদের ফরমান লাভ করেন। অর্থাৎ সম্রাট শাহ আলমকে বছরে ২৬ লাখ টাকা দানের পরিবর্তে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি পেয়ে গেল বাংলা, বিহার ও উড়িষ্যার রাজস্ব আদায়ের অধিকার। এ বছরই মীর কাশিমের স্থলাভিষিক্ত মীরজাফরের পুত্র নাজমুদুল্লাহর কাছ থেকে তারা প্রশাসনিক ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণের অধিকারও কেড়ে নেয়।

১৭৬৯-৭০ ॥ (বাংলা ১১৭৬) ছিয়াত্তরের মন্বন্তর : বাংলা ও বাংলা সন্নিহিত প্রদেশগুলোর এক-তৃতীয়াংশ মানুষ দুর্ভিক্ষে মারা যায়। আনন্দমঠে বঙ্কিমচন্দ্র লিখেছেন- "লোকে প্রথম ভিক্ষা করিতে লাগিল। তারপর কে ভিক্ষা দেয়। .....গরু বেচিল, লাঙ্গল বেচিল, জোতজমা বেচিল। তারপর মেয়ে বেচিতে আরম্ভ করি। তারপর স্ত্রী বেচিতে আরম্ভ করিল। তারপর মেয়ে, ছেলে, স্ত্রী কে কেনে?... খাদ্যাভাবে গাছের পাতা খাইতে লাগিল। ঘাস খাইতে আরম্ভ করিল। আগাছা খাইতে লাগিল। ইকর ও বন্যেরা কুকুর, ইঁদুর ও বিড়াল খাইতে লাগিল। অনেকে পালাইল, যাহারা পালাল না তাহারা অখাদ্য খাইয়া, না খাইয়া রোগে পড়িয়া প্রাণত্যাগ করিতে লাগিল।"
কিন্তু সে বছরও (১৭৭১) ইংরেজের নীট রাজস্ব আদায় পূর্ববর্তী ষোল আনা ফসল জন্মানোর বছরের আদায়কেও ছাড়িয়ে যায়।

১৮০০॥ সন্ন্যাসী-ফকির বিদ্রোহ : ছিয়াত্তরের মন্বন্তরের সময় ইংরেজ শাসক ও তাদের রাজস্ব আদায়কারী কর্মচারীদের বিরুদ্ধে উত্তরবঙ্গের গরীব হিন্দু-মুসলমান চাষীরা বিদ্রোহ করেছিল। প্রায় তিন দশক ধরে এ বিদ্রোহ চলে। তাদের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন সন্ন্যাসী ও ফকিরেরা। তাদের নেতাদের মাঝে প্রধান ছিলেন মজনু শাহ্ ও ভবানী পাঠক। বহুগ্রাম জ্বালিয়ে, নারী-শিশু-বৃদ্ধ নির্বিচারে বহু গ্রামবাসীকে হত্যা করে এক দশক পরে সন্ন্যাসী-ফকির বিদ্রোহ দমন করতে সক্ষম হয় ইংরেজরা।

১৭৯৮-৯৯ ॥ মেদিনীপুর ও বাঁচুড়ার চুয়াড় বিদ্রোহ : মেদিনীপুর, বাঁচুড়া ও মানভূমের জঙ্গলমহলের অধিবাসী আদিম ও অন্ত্যজ শ্রেণীর মানুষদের স্থানীয় জমিদারশ্রেণী অবজ্ঞাভরে চুয়ার্ড নাম দিয়েছিল। তাদের জমি কেড়ে নেয়ায় বা সাধ্যাতীত মাত্রায় নতুন কর ধার্য করায় বিদ্রোহ দেখা দেয়। ওয়ারেন হেস্টিংস ব্যর্থ হন এ বিদ্রোহ দমনে। ১৭৯৯ সালে বড়লাট ওয়েলেসলি চুয়াড় বিদ্রোহের নেতাদের ফাঁসি দিয়ে বিদ্রোহ নিয়ন্ত্রণে আনেন।

১৭৯৩॥ চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত : রাজস্ব আদায়ের সুবিধার্থে বড়লাট কর্নওয়ালিস সমগ্র বাংলা প্রেসিডেন্সিতে প্রবর্তন করলেন নতুন ভূমিরাজস্ব ব্যবস্থা চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত। মেহনতী চাষীর সর্বনাশ হলো এবং এক ধরনের ভূঁইফোড় জমিদার গোষ্ঠীর জন্ম হলো। এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ দেখা দিলো সর্বত্র।

১৭৯৯ ॥ টিপু সুলতানের ব্রিটিশ বিরোধী সংগ্রাম : দক্ষিণ ভারতে ইংরেজের সাম্রাজ্য বিস্তারের পথে প্রধান বাধা ছিলেন হায়দার আলী ও তার ছেলে টিপু। ইংরেজের শত্রু ফরাসীদের সাহায্যে টিপু আধুনিক অর্থনীতি ও সেনাবাহিনী গড়ে তোলার চেষ্টা করেছিলেন। তাই আর দেরি না করে বড়লাট ওয়েলেসলি বিরাট সৈন্যবাহিনী নিয়ে টিপুর রাজ্য আক্রমণ করেন। এক সেনাপতির বিশ্বাসঘাতকতায় রাজধানী শ্রীরঙ্গপত্তনের দখল নেয় ইংরেজ সৈন্য আর বীরের মতো লড়তে লড়তে রণক্ষেত্রে প্রাণ দেন টিপু।

১৭৯৯-১৮০১ ॥ পলিগার বিদ্রোহ : বর্তমান তামিলনাড়-র টিনেডেলি অঞ্চলের পলিগাররা ছিলেন সামন্ত জমিদার যারা আটটের নবাবের আধিপত্য স্বীকার করলেও প্রায় স্বাধীন রাজার মতো চলতেন। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি নবাবের সঙ্গে বন্দোবস্ত করে তাদের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করলে পলিগাররা বিদ্রোহ করে। এদের মাঝে অগ্রণী ছিলেন পাঞ্জালাল কুরিচির পলিগার বীর পাঞ্জেম কাট্টাবোখান। ১৭৯৯ সালের যুদ্ধে পরাজিত হয়ে পালিয়ে যান এবং বিশ্বাসঘাতকতার ফলে কিছুদিনের মধ্যে ধরা পড়েন। তার ফাঁসি হয়। কাট্টাবোখান নিহত হলেও কিন্তু যুদ্ধ থামেনি।

১৮১৭-২৫॥ উড়িষ্যার পাঠক অভ্যুত্থান : রাজারা পাঠকদের মাইনে দিতেন না-তবে জীবিকা নির্বাহের জন্যে তাদের ‘চাকরান' জমি দেয়া হতো। ইংরেজ ঐ রাজাদের একে একে ক্ষমতাচ্যুত করার সঙ্গে সঙ্গে পাইকদের ‘চাকরান' জমিও কেড়ে নিল। এর বিরুদ্ধে পুরীর বকসী জগবন্ধুর নেতৃত্বে বিদ্রোহ হয়। বিদ্রোহ দমনে বিশাল ইংরেজ বাহিনী পুরী দখল করেÑ জগবন্ধু জঙ্গলে পালিয়ে যান।

১৮২৪-৩০ ॥ কিট্টরের রানী চান্নাম্মা ও সাঙ্গোলির রায়ান্নার সংগ্রাম : কর্ণাটকের বেল গাঁওয়ের কাছেই ছোট্ট বিক্টর রাজ্যের অপুত্রক রাজার মৃত্যু হলে ইংরেজরা রাজ্যটি আত্মসাৎ করার চেষ্টা করে। বাধা দেন বিধবা রানী চান্নাম্মা। ১৮২৫-এ শুরু হয় প্রতিরোধ সংগ্রাম। অসম যুদ্ধে তিনি পরাজিত ও বন্দী হন এবং কারাগারেই তার মৃত্যু হয়। কিন্তু প্রতিরোধ থামে না। বিদ্রোহের মশাল হাতে এগিয়ে আসেন সাঙ্গোলির চাষীর ছেলে রায়ান্না। ১৮৩০ সালের এপ্রিলে এংরেজ ফৌজ রক্তের বন্যায় ডুবিয়ে দেয় প্রতিরোধ সংগ্রাম-ফাঁসিতে ঝুলিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করে রায়ান্নাকে।

১৮২৪-২৫॥ বিদ্রোহ দিকে দিকে : মধ্যভারতের বুন্দেলখ- ইংরেজ শাসনের বিরুদ্ধে মুসলমান ও হিন্দু গরীব চাষীরা বিদ্রোহ করে। একই ধরনের বিদ্রোহে ফেটে পড়ে বর্তমান হরিয়ানার রোহতাক ও হিযাব জেলার জাঠ চাষীরা ১৮২৪ সালে। ১৮৩৯ থেকে ১৮৪৫ সাল পর্যন্ত সমগ্র গুজরাটে সংঘটিত হয় বোল বিদ্রোহ। ১৮৪৫ সালে মহারাষ্ট্রের সামন্তওয়াড়ি ও কোলাপুরে বিদ্রোহ দেখা দেয়। ১৮২৯-৩৩ সালে ভারতের উত্তর পূর্বাঞ্চলের মেঘালয়ের অধিবাসীরা সংঘটিত করে খাসী বিদ্রোহ। তেমনই ১৮৩০ থেকে ১৮৩৩ পর্যন্ত ছোটনাগপুরের বিস্তীর্ণ উপজাতি অঞ্চল জুড়ে দেখা দেয় আদিবাসী বিদ্রোহ। রাঁচী থেকে মালভূমি পর্যন্ত লাখ লাখ মুন্ডা ও হো এই বিদ্রোহে অংশ নেয়।

১৮৫৫ ॥ সাঁওতাল বিদ্রোহ : সিধু, কানু, ভৈরব প্রমুখের নেতৃত্বে হাজার হাজার সাঁওতাল ইংরেজ শাসনের অবসান ও স্বাধীন সাঁওতাল রাজত্ব প্রতিষ্ঠার সংকল্পে কলকাতা মার্চ করে। সংঘর্ষে ২৩ হাজার সাঁওতালকে হত্যা করে ইংরেজরা।

১৭৭১-১৮৩১॥ ওয়াহাবি আন্দোলন : ইংরেজ রাজত্বের প্রথম একশ' বছরে ভিন্ন ধরনের প্রতিরোধ সংগ্রাম ওয়াহাবি ও ফরাজী আন্দোলন। ওয়াহাবিদের নেতা বেরিলির সৈয়দ আহমদ (১৭৮৬-১৮৩১)-এর প্রচারের মূল কথা ছিল। ভারতবর্ষ এখন শত্রুর দেশে পরিণত হয়েছে। ইংরেজরাই ভারতের স্বাধীনতার শত্রু এবং সমস্ত ওয়াহাবিরই কর্তব্য হলোÑ এই বিদেশী শাসনের উচ্ছেদ ঘটানো। বাংলা অঞ্চলেও ওয়াহাবি বিদ্রোহের ঢেউ লেগেছিল। বারাসাতের স্বরূপনগর ও বাদুড়িয়া অঞ্চলে এই বিদ্রোহের নেতা ছিলেন মীর নেসার আলী তিতুমীর। তিনি এক বাঁশের কেল্লা নির্মাণ করে ইংরেজদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করলেন। যুদ্ধে তিমুমীরসহ ৪০ জন প্রাণ দিলেন। প্রাণদ- হলো তিতুর সেনাপতি গোলাম মাসুমের, বাকিদের যাবজ্জীবন দ্বীপান্তর। আন্দামানে বন্দী হিসেবে প্রথম চালান হয় ওয়াহাবিরাই।

১৮৪২॥ ফরাজি আন্দোলন : ওয়াহাবি আন্দোলনেরই সমগোত্রীয় ছিল ফরাজি আন্দোলন। "পৃথিবীর সমস্ত জমির মালিক আল্লাহ। তাঁর চোখে সবাই সমান। কাজেই তাঁকে যদি মান্য করি, তবে জমিদারদের খাজনা দেবো না, নীলকর সাহেবদের নীল বুনব না, বিদেশী ফিরিঙ্গিদের রাজত্ব মানবো না"- ১৮৪২ সালে এ ঘোষণা দিলেন ফরাজি আন্দোলনের নেতা দুদু মিয়া। ফরিদপুরের মাদারীপুরে তার জন্ম, আসল নাম মুহাম্মদ সোহাইল। দুদু মিয়া সমস্ত বাংলাদেশকে অনেকগুলো অঞ্চল বা হাল্কায় ভাগ করেন। প্রতিটি হাল্কাতে ৩০০ থেকে ৫০০ ফরাজি পরিবার বাস করত। প্রতিটি হাল্কার মাথার ওপরে থাকতেন একজন সংগঠক, তাকে বলা হতো ওস্তাদ। সারা বাংলাদেশে এ রকম কয়েক হাজার ওস্তাদ ছিলেন, আর তাদের মাথার ওপর ছিলেন দুদু মিয়া। ফরাজি আন্দোলন মাদারীপুর থেকে প্রথমে বাকেরগঞ্জে, তারপর একদিকে ঢাকা, কুমিল্লা, ময়মনসিংহ অপরদিকে যশোর ও ২৪ পরগণা জেলায় প্রসার লাভ করে। নীলকর সাহেব, দেশী জমিদার ও ইংরেজ ম্যাজিস্ট্রেটরা অতিষ্ঠ হয়ে উঠলেন। বহু ফরাজি গ্রেফতার হলেন, কারারুদ্ধ হলেন দুদু মিয়া। জেলের মধ্যে ১৮৬২ সালে তার মৃত্যু হয়। তবে একটা কথা। ওয়াহাবি ও ফরাজি আন্দোলন প্রধানত মুসলমানদের মাঝেই সীমাবদ্ধ থাকার ফলে এর একটা ধর্মীয় সীমাবদ্ধতার দিকও ছিল। আর এ সুযোগটাই নিয়েছিল ইংরেজ শাসকবর্গ। বলাই বাহুল্য।
ইংরেজ রাজত্বের প্রথম একশ' বছরের ইতিহাস এমনই অজস্র ছোট-বড় বিদ্রোহে ভরা।

১৮৫৭ ॥ সিপাহী বিদ্রোহ : ১৮৫৭-এর মে মাসে প্রথমে মীরাটের ছাউনিতে। পরে দিল্লীতে দেখা দিলো সিপাহীদের ব্যাপক বিদ্রোহ। এ বছরেরই ২৯ মার্চ ব্যারাকপুরের ছাউনিতে বিদ্রোহের নিশান উড়িয়ে দেন তরুণ সিপাহী মঙ্গল পান্ডে। প্রাণ দেন ফাঁসিকাষ্ঠে। দিল্লীতে বিদ্রোহী সিপাহীদের প্রচারপত্রে লেখা হলো: ইংরেজ শাসনে আমাদের দেশ স্বাধীনতা হারিয়েছে। জনসাধারণ দরিদ্র ও সর্বস্বান্ত। করভারে তারা জর্জরিত। খাদ্য ও বস্ত্রের নিদারুণ অভাব, মেয়েদের ইজ্জত পর্যন্ত বিপন্ন। ইংরেজদের অত্যাচারের কোনও সীমা নেই। দাসত্বের এই অপমান। এই যন্ত্রণা ভারতবাসী আর কতদিন সহ্য করবে? ৯ মে মিরাটের ছাউনিতে বিদ্রোহ শুরু হয়। ১১ মে বিদ্রোহী সিপাহীরা দিল্লী দখল করে দ্বিতীয় বাহাদুর শাহকে স্বাধীন ভারতের বাদশাহ বলে ঘোষণা করেন। ৩০ মে বিদ্রোহের দাবানল জ্বলে ওঠে লক্ষেèৗতে, সমগ্র আওয়াদ অঞ্চলে। ৪ জুন বিদ্রোহ হয় কানপুরে। ক্রমে বিদ্রোহ ছড়িয়ে পড়ে শতদ্রু নদীর দক্ষিণ থেকে বিহার পর্যন্ত। উত্তর প্রদেশ থেকে মধ্যভারত পর্যন্ত সমগ্র হিন্দি উর্দুভাষী বিরাট অঞ্চলে। সমগ্র ভারত হয়ে ওঠে অশান্ত। ভারতে ব্রিটিশ সাম্রজ্যের ভিত টলে ওঠে।
১৮৫৭-র বিদ্রোহের মুখপত্র ছিল পায়াম-এ আজাদী পত্রিকা। তার এক সম্পাদকীয়তে লেখা হয়, "ইংরেজ শাসকরা চেষ্টা করবে হিন্দু ও মুসলমানদের পরস্পরের বিরুদ্ধে ব্যবহার করতে। ভাইসব। তাদের শয়তানির ফাঁদে কেউ পা দেবেন না। হিন্দুরা, মুসলমানরা, ভাইরা, সমস্ত তুচ্ছ ভেদাভেদ ভুলে স্বাধীনতার যুদ্ধে একই পতাকার নীচে ঐক্যবদ্ধ হোন।"
ইংরেজ সাম্রজ্যবাদীরা ভারতের এই স্বাধীনতা বিদ্রোহকে দমন করে নৃশংসতার সঙ্গে। কামানের মুখে হাজার হাজার সিপাহীকে বেঁধে তারপর কামান দেগে বীভৎসভাবে হত্যা করা হলো তাদের। গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দিলো ইংরেজরা। সমগ্র উত্তর ও মধ্যভারত জুড়ে নির্বিচারে চলল হত্যাকান্ড।

১৮৫৯-৬০ ॥ নীল বিদ্রোহ : বাংলাদেশের বিস্তীর্ণ অঞ্চলজুড়ে দেখা দেয় নীলকর সাহেবদের অত্যাচারের বিরুদ্ধে গণবিক্ষোভ ‘নীল বিদ্রোহ' নামেই পরিচিত। নীলকর সাহেবদের বর্বর অত্যাচারের প্রেক্ষাপটে দীনবন্ধু মিত্র লিখলেন-‘নীল দর্পণ' নাটক। যশোরে ১৮৩০তে ও পরে ১৮৮৯-৯০তে বিহারের দ্বারভাঙ্গা ও চকারণে ১৮৬৬-৬৮ পর্যন্ত চললো নীল বিদ্রোহ।

১৮৭২ ॥ কুকা বিদ্রোহ : ঊনবিংশ শতাব্দীর ষাট ও সত্তরের দশকে পাঞ্জাবের দেশপ্রেমিক শিখরা সংঘটিত করেন কুকা বিদ্রোহ। ১৮৭২ এ ইংরেজ ফৌজ প্রবল অত্যাচার করে বহু গ্রাম জ্বালিয়ে দমন করে কুকা বিদ্রোহ। বিদ্রোহের নেতা রাম সিং রেঙ্গুনে নির্বাসনে প্রাণত্যাগ করেন ১৮৮৫ সালে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন